পশ্চিমবঙ্গ এসএসসি নিয়োগের রায়: সুপ্রিম কোর্ট ২৫,০০০-এর বেশি চাকরি বাতিল করলো, নতুন নিয়োগের নির্দেশ

Bharat Bazer
6 Min Read

This post is also available in: English हिन्दी (Hindi)

- Advertisement -

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক যুগান্তকারী রায়ে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছে। এর ফলে ২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিযুক্ত ২৫,০০০-এর বেশি শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।[১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬] ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বিতর্কিত ছিল।[৩, ৪, ৬] আসুন জেনে নেওয়া যাক এই রায় এবং এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে।

২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ: অনিয়মের ইতিহাস

- Advertisement -

২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগের লক্ষ্য ছিল রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক এবং গ্রুপ সি ও ডি পদে অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ করা।[২, ৩, ৪, ৬] প্রায় ২৩ লক্ষ প্রার্থী প্রায় ২৪,৬৪০টি পদের জন্য আবেদন করেছিলেন।[৩, ৬] তবে, শীঘ্রই জানা যায় যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, যার মধ্যে ওএমআর শিট কারচুপি এবং প্রার্থীদের র‌্যাঙ্কিংয়ে অনিয়ম অন্যতম।[৩, ৬] তদন্তে দেখা গেছে যে এসএসসি কর্তৃপক্ষও বৈধভাবে নির্বাচিত এবং দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনি।[২, ৪] এমনকি সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) ওএমআর শিট প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বে থাকা সংস্থা NYSA-এর এক কর্মীর কাছ থেকে আসল স্ক্যান করা ওএমআর শিটের ছবি উদ্ধার করেছে।[৪]

সুপ্রিম কোর্টের রায়: মূল বিষয়গুলি

- Advertisement -

২০২৫ সালের ৩রা এপ্রিল, সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায় ঘোষণা করে এবং কলকাতা হাইকোর্টের নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে।[২, ৩, ৪, ৫, ৬] প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্টভাবে জানায় যে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি “জালিয়াতি ও কারচুপিতে কলুষিত”।[৫]

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মূল বিষয়গুলি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • নিয়োগ বাতিল: ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।[১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬]
  • অধিকাংশের বেতন ফেরত লাগবে না: একটি বড় স্বস্তি হিসাবে, সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে যাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগকেই ইতিমধ্যে পাওয়া বেতন ও অন্যান্য সুবিধা ফেরত দিতে হবে না।[৩, ৫, ৬]
  • অবৈধভাবে নিযুক্তদের জন্য ফেরত: তবে, যারা অনুমোদিত শূন্যপদের বাইরে বা নিয়োগের সময়সীমার পরে নিযুক্ত হয়েছেন, তাদের কলকাতা হাইকোর্টের পূর্বের আদেশ অনুযায়ী ১২% সুদ-সহ সমস্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে।[৩, ৪, ৬]
  • নতুন নিয়োগের নির্দেশ: পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।[১, ৪, ৫]
  • পুনরায় আবেদনের যোগ্যতা: যাদের নিয়োগ অনিয়মের কারণে বাতিল হয়েছে, কিন্তু যারা ব্যক্তিগতভাবে কোনো দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন না, তারা এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন।[১, ৪]
  • সিবিআই তদন্ত চলবে: সিবিআই এই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে।[৩, ৪, ৬]
  • রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা: সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের ডিজিটাল রেকর্ড সংরক্ষণে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছে, যা “সিস্টেমিক জালিয়াতি”-তে অবদান রেখেছে।[৪]

এরপর কী? নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া

সুপ্রিম কোর্টের তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ অনেকের মনে আশার সঞ্চার করেছে। যদিও এসএসসি এখনও বিস্তারিত নিয়মাবলী ঘোষণা করেনি, তবে যা জানা গেছে তা নিচে উল্লেখ করা হলো [১, ৪, ৫]:

  • তিন মাসের সময়সীমা: পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। তবে, প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, এই সময়সীমা মূলত उन প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য যারা পূর্বে সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত পদে কর্মরত ছিলেন।[১] সম্পূর্ণ নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়সীমা এর থেকে বেশি হতে পারে।
  • যোগ্যতা: যাদের নিয়োগ ব্যাপক অনিয়মের কারণে বাতিল হয়েছে, কিন্তু যারা কোনো প্রকার দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না, তারা পুনরায় আবেদন করতে পারবেন। এই প্রার্থীদের জন্য বয়সের ছাড়ও দেওয়া হবে।[১, ৪] যারা ২০১৬ সালের নিয়োগে অংশগ্রহণ করেননি, তাদের নতুন করে আবেদনের যোগ্যতা সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। সম্ভবত এসএসসি-র আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হবে।[১]
  • প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী: যারা এসএসসি-র চাকরি হারানোর আগে অন্য সরকারি পদে কর্মরত ছিলেন, তারা তিন মাসের মধ্যে তাদের আগের পদে ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এসএসসি-তে কাজের সময়কালকে তাদের কর্মজীবনে ‘বিরতি’ হিসাবে গণ্য করা হতে পারে।[১]

প্রভাব ও আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়, যদিও নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবুও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।[২] রাজ্য সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, যাতে প্রার্থীদের আস্থা ফিরে আসে। ইতিমধ্যেই একই নিয়োগ সংস্থা ও সরকারি কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়োগে জড়িত থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।[২]

২৫,০০০-এর বেশি চাকরি বাতিল হওয়ায় রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা দ্রুত পূরণ করা প্রয়োজন।[২] এই বিশাল সংখ্যক পদে নিয়োগ তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

উপসংহার: ন্যায্য নিয়োগের দিকে এক পদক্ষেপ

পশ্চিমবঙ্গ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এটি যাদের নিয়োগ বাতিল হয়েছে তাদের জন্য অনিশ্চয়তা নিয়ে এসেছে, তবে এটি ন্যায্যতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি নতুন শুরুর সুযোগও করে দিয়েছে। আগ্রহী প্রার্থী এবং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যুক্ত সকলেরই পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিকে নজর রাখা উচিত। এই রায় সরকারি নিয়োগের পবিত্রতা রক্ষা এবং সকল যোগ্য প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়।

This post is also available in: English हिन्दी (Hindi)

Share This Article